স্বদেশ ডেস্ক:
চট্টগ্রামে সমন্বিত উদ্যোগে আজ তৃতীয়বারের মতো শুরু হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা। ঢাকার বাইরে এটিই বৃহত্তম বইমেলা হিসাবে পরিচিত। তবে সঠিক সময়ে স্টল বুঝিয়ে না দেওয়ায় এবারও নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয়নি মেলা প্রাঙ্গণের কাজ। ফলে স্টল না গুছিয়েই শুরু হচ্ছে মেলার কার্যক্রম। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বিকাল ৪টায় বইমেলাটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। চসিকের উদ্যোগে আয়োজিত এই মেলা চলবে ১০ মার্চ পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে মেলা প্রাঙ্গণ। তবে ছুটির দিনে মেলা শুরু হবে সকাল ১০টা থেকে।
শনিবার নগরীর এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম মাঠে সরেজমিন দেখা গেছে, জিমনেশিয়ামের পাশে তৈরি করা হয়েছে বইমেলার মূলমঞ্চ। মেলার স্টল রয়েছে জিমনেশিয়াম মাঠে। এ সময় স্টল ও মঞ্চের কাজে শ্রমিকদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায়। মেলা প্রাঙ্গণে যাতে ধুলাবালি না ওড়ে সেজন্য ইট বিছানো হচ্ছে। তবে শনিবার বিকাল পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গণের তিনভাগের একভাগ জায়গায়ও ইট বিছানো শেষ হয়নি। একাধিক ইটের স্তূপ ছিল স্টলগুলোর সামনে। কর্মরত নির্মাণ শ্রমিকদেরও তড়িঘড়ি করে ইট বিছানোর কাজ করতে দেখা যায়। এছাড়া তিনটি স্টল ছাড়া সবকটি স্টলের সামনে চলছিল সাজসজ্জার কাজ। জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার লটারির মাধ্যমে প্রকাশনা সংস্থাগুলোকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মূলত এরপর থেকেই স্টল সাজানোর কাজ শুরু করে প্রকাশনাগুলো।
প্রকাশকদের অভিযোগ, চট্টগ্রামে আয়োজিত মেলাটি দেশের দ্বিতীয় বইমেলা হিসাবে পরিচিত হলেও প্রস্তুতিতে পিছিয়ে রয়েছে। এমন সময়ে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যখন স্টল গুছানোর জন্য সময় পাওয়া যাচ্ছে না। নির্দিষ্ট সময়ে স্টল সাজানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চসিক সূত্র জানায়, মেলায় চট্টগ্রাম ও ঢাকার ৯৫টি প্রকাশনা সংস্থার ১২০টি স্টল থাকবে। এর মধ্যে ৭০টি সিঙ্গেল ও ২৫টি ডাবল স্টল থাকবে। মেলা মঞ্চে প্রতিদিন নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও বিষয়ভিত্তিক আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিদিনের আলোচনাসভায় বিচিত্র বিষয়ের সমাহার রয়েছে।
অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে মাতৃভাষা দিবস, লোক উৎসব, রবীন্দ্র উৎসব, তারুণ্য উৎসব, নারী উৎসব, বিতর্ক উৎসব, নজরুল দিবস, বিদ্রোহী কবিতার শতবর্ষ উদ্যাপন, মরমী উৎসব, আবৃত্তি উৎসব, নৃগোষ্ঠী উৎসব, চাটগাঁ উৎসব, যুব উৎসব, পেশাজীবী সমাবেশ, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের আলোচনা অনুষ্ঠান, ছড়া উৎসবসহ ১০ মার্চ সমাপনী অনুষ্ঠান। দেশের খ্যাতিমান কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বরেণ্য ব্যক্তিরা বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন। চট্টগ্রামে প্রথমে ১৭ ফেব্রুয়ারি মেলা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রস্তুতিসহ নানা কারণে তা পিছিয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৯ সালে তৎকালীন চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের উদ্যোগে নগরীতে সমন্বিত বইমেলা শুরু হয়। এর মধ্যে করোনা মহামারির কারণে গত বছর চট্টগ্রামে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে এর আগের দুবারও মেলা শুরুর পর স্টল সাজানোর কাজ করতে দেখা গেছে প্রকাশনা সংস্থাগুলোকে। এবারও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতি ও মেলা আয়োজক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আলম নিপু যুগান্তরকে বলেন, চট্টগ্রামের বইমেলার আয়োজন ঢাকার ওপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ ঢাকায় বইমেলা হচ্ছে কি হচ্ছে না, এ নিয়ে সংশয় ছিল। এ কারণে আমরাও সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। বইমেলা যেহেতু চসিক আয়োজন করে, সেজন্য তাদের সিদ্ধান্তের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হয়। এসব কারণে কিছু সময় চলে যায়। তারপরও সব প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। প্রকাশকরাও সবাই চলে এসেছেন। সব মিলিয়ে এবারও সফল বইমেলা হবে বলে আশা করছি।